1 অব্রাহাম যখন একদিন ভর-দুপুরে মম্রির বিশাল গাছগুলির কাছে তাঁর তাঁবুর প্রবেশদ্বারে বসেছিলেন, তখন সদাপ্রভু তাঁর কাছে আবির্ভূত হলেন। 2 অব্রাহাম চোখ তুলে চেয়ে দেখলেন তিনজন লোক তাঁর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের দেখতে পেয়ে তিনি তাঁদের সাথে দেখা করার জন্য তাড়াতাড়ি তাঁবুর প্রবেশদ্বার ছেড়ে এগিয়ে গেলেন ও মাটিতে উবুড় হয়ে প্রণাম করলেন।
3 তিনি বললেন, “হে আমার প্রভু[a], আপনার দৃষ্টিতে আমি যদি অনুগ্রহ পেয়ে থাকি, তবে আপনার এই দাসকে পার করে যাবেন না। 4 একটু জল এনে দিই, যেন আপনারা পা-টা ধুয়ে নিয়ে এই গাছের তলায় বিশ্রাম করে নিতে পারেন। 5 আপনারা যখন আপনাদের এই দাসের কাছে এসেই পড়েছেন—আপনাদের জন্য আমি কিছু খাবার এনে দিই, যেন আপনারা তরতাজা হয়ে আপনাদের যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে পারেন।”
6 অতএব অব্রাহাম চট্ করে তাঁবুতে সারার কাছে চলে গেলেন। তিনি বললেন, “তাড়াতাড়ি করো, তিন মান[b] মিহি আটা নাও ও তা মেখে কয়েকটি রুটি সেঁকে দাও।”
7 পরে তিনি দৌড়ে গোয়ালঘরে গেলেন এবং বাছাই করা একটি কচি বাছুর নিয়ে সেটি তাঁর এক দাসকে দিলেন, যে চট্ করে সেটি রান্না করতে গেল। 8 পরে অব্রাহাম খানিকটা দই ও দুধ এবং রান্না করা বাছুরের মাংস এনে তাঁদের সামনে পরিবেশন করলেন। তাঁরা যখন ভোজনপান করছিলেন, তিনি তখন তাঁদের কাছে, একটি গাছের তলায় দাঁড়িয়েছিলেন।
9 “তোমার স্ত্রী সারা কোথায়?” তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন।
10 তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “আগামী বছর মোটামুটি এইসময় আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে ফিরে আসব, এবং তোমার স্ত্রী সারা এক পুত্রসন্তান লাভ করবে।”
13 তখন সদাপ্রভু অব্রাহামকে বললেন, “সারা কেন হেসে বলল, ‘সত্যিই কি আমি এক সন্তান লাভ করব, আমি যে এখন বৃদ্ধা হয়ে গিয়েছি?’ 14 সদাপ্রভুর কাছে কোনো কিছু কি খুব কঠিন? আগামী বছর নিরূপিত সময়ে আমি তোমার কাছে ফিরে আসব, এবং সারার কাছে তখন এক পুত্রসন্তান থাকবে।”
15 সারা ভয় পেয়েছিলেন, তাই তিনি মিথ্যামিথ্যি বললেন, “আমি হাসিনি।”
16 সেই লোকেরা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে নিচে সদোমের দিকে তাকালেন, এবং অব্রাহাম তাঁদের বিদায় জানানোর জন্য তাঁদের সঙ্গে কিছুটা পথ হাঁটলেন। 17 তখন সদাপ্রভু বললেন, “আমি যা করতে যাচ্ছি তা কি আমি অব্রাহামের কাছে লুকাব?” 18 অব্রাহাম নিঃসন্দেহে মহান ও শক্তিশালী এক জাতিতে পরিণত হবে, এবং পৃথিবীর সব জাতি তার মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ করবে।[c] 19 কারণ আমি তাকে মনোনীত করেছি, যেন যা উপযুক্ত ও ন্যায্য, তা করার মাধ্যমে সদাপ্রভুর পথে চলার ক্ষেত্রে সে তারপরে তার সন্তানদের ও তার পরিবারকে পথ দেখায়, ও যেন সদাপ্রভু অব্রাহামের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা তিনি সফল করেন।
20 পরে সদাপ্রভু বললেন, “সদোম ও ঘমোরার বিরুদ্ধে ওঠা কোলাহল এত তীব্র ও তাদের পাপ এত অসহ্য 21 যে আমি নিচে নেমে যাব এবং দেখব তারা যা করেছে, তা সত্যিই আমার কানে পৌঁছানো কোলাহলের মতো মন্দ কি না। যদি তা না হয়, আমি তা জানতে পারব।”
22 সেই লোকেরা পিছনে ফিরে সদোমের দিকে চলে গেলেন, কিন্তু অব্রাহাম সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন।[d] 23 পরে অব্রাহাম তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন: “তুমি কি দুষ্টদের সাথে ধার্মিকদেরও দ্রুত নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে? 24 নগরে যদি পঞ্চাশ জন ধার্মিক লোক থাকে তবে কী হবে? তুমি কি সত্যিই নগরটি নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে এবং সেখানকার পঞ্চাশ জন ধার্মিক লোকের খাতিরে সেই স্থানটিকে অব্যাহতি দেবে[e] না? 25 এমন কাজ করা থেকে তুমি বিরত থাকো—দুষ্টদের সাথে ধার্মিকদের হত্যা করা, ধার্মিকদের ও দুষ্টদের প্রতি একইরকম আচরণ করা—এমন কাজ করা থেকে তুমি বিরত থাকো! সমগ্র পৃথিবীর বিচারক কি ন্যায়বিচার করবেন না?”
26 সদাপ্রভু বললেন, “সদোম নগরে আমি যদি পঞ্চাশ জন ধার্মিক লোক পাই, তবে তাদের খাতিরে সমগ্র স্থানটিকে আমি অব্যাহতি দেব।”
27 তখন অব্রাহাম আরেকবার বলে উঠলেন: “যদিও আমি ধুলো ও ভস্ম ছাড়া আর কিছুই নই, তাও যখন আমি প্রভুর সাথে কথা বলার সাহস পেয়েই গিয়েছি, 28 তখন বলি কি, ধার্মিকদের সংখ্যা যদি পঞ্চাশ জনের থেকে পাঁচজন কম হয়, তাতে কী? পাঁচজন লোক কম থাকার জন্য কি তুমি সমগ্র নগরটিকে ধ্বংস করে দেবে?”
29 আরেকবার অব্রাহাম তাঁকে বললেন, “সেখানে যদি শুধু চল্লিশ জন পাওয়া যায়, তবে কী হবে?”
30 তখন অব্রাহাম বললেন, “প্রভু, রাগ করবেন না, কিন্তু আমায় বলতে দিন। সেখানে যদি শুধু ত্রিশজন পাওয়া যায়, তবে কী হবে?”
31 অব্রাহাম বললেন, “প্রভুর সাথে কথা বলার জন্য আমি যখন এতটাই সাহসী হয়েছি, তখন বলি কি, সেখানে যদি শুধু কুড়ি জন পাওয়া যায় তবে কী হবে?”
32 তখন অব্রাহাম বললেন, “প্রভু রাগ করবেন না, আমাকে শুধু আর একটিবার বলতে দিন। সেখানে যদি শুধু দশজন পাওয়া যায়, তবে কী হবে?”
33 অব্রাহামের সাথে কথোপকথন শেষ করে সদাপ্রভু চলে গেলেন, এবং অব্রাহাম ঘরে ফিরে গেলেন।
<- আদি পুস্তক 17আদি পুস্তক 19 ->